শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:৩৩ পূর্বাহ্ন
বিশেষ প্রতিবেদক:
কক্সবাজারের সেন্টমার্টিনে পর্যটক সীমিত করলে পর্যটনশিল্প ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হবে জানিয়েছেন ‘সী ক্রুজ অপারেটির ওনার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ’ (স্কোয়াব)।
বুধবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুর সাড়ে ১২টারদিকে কক্সবাজার শহরে লাবনী পয়েন্টে অবস্থিত একটি তারকামানের হোটেলের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য দেন ‘স্কোয়াব’ সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর। এতে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, কেয়ারীর প্রতিনিধি নুর মোহাম্মদ সিদ্দিকী ও টুয়াকের প্রতিনিধি এস এ কাজল।
লিখিত বক্তব্যে জানানো হয়, সেন্টমার্টিনে জাহাজ চলাচল সীমিত করার চিন্তা করছে বিআইডব্লিউটিএ। মাত্র দুইটি জাহাজ চললে কয়েক হাজার পর্যটক বঞ্চিত হবে, যার প্রভাব পড়বে পুরো পর্যটন শিল্পে। ক্ষতিগ্রস্ত হবে কক্সবাজারের হোটেল মোটেল ব্যবসা। জাহাজ চলাচল বন্ধ হলেও বিকল্প পথে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাঠের নৌকায় চড়ে সেন্টমার্টিন যাবে পর্যটকেরা। সুতরাং যে উদ্দেশ্যে জাহাজ চলাচল সীমিত করা হচ্ছে তার কোন সুফল আসবে না। বরং ঝুঁকি বাড়বে পর্যটন খাতে।
এতে আরও বলা হয়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে জারিকৃত ১৩ দফা নির্দেশনার সাথে আমরা একমত এবং এসব বাস্তবায়নে মাঠে আছি। কিন্তু নানা অজুহাতে জাহাজ চলাচল এবং পর্যটক সীমিত করা হলে হোটেল ব্যবসাসহ পর্যটনখাতে বিরূপ প্রভাব পড়বে। আমরা জানতে পেরেছি, সেন্টমার্টিনে অদূর ভবিষ্যতে দুইটি জাহাজ চলবে এবং ১২৫০ জন পর্যটক যাতায়াতে সুযোগ পাবে। স্বল্প সংখ্যক পর্যটক ব্যবস্থাপনায় দ্বীপের ১৮৮ টি আবাসিক হোটেলে নতুন সংকট সৃষ্টি হবে। এতে আরও নলা হয় সেন্টমার্টিনের অন্তত ৫০০০ মানুষ জীবিকা নির্বাহ করছে। পর্যটক সীমিত করলে তাদের জীবিকাও হুমকিতে পড়বে।
স্কোয়াব’ সভাপতি তোফায়েল আহমদ বলেন, সেন্টমার্টিন নিয়ে আমাদের সুপারিশ হলো, বর্তমান চলাচলরত ১০টি জাহাজে করে সর্বোচ্চ ৩০০০ পর্যটক যাতায়াত করবে। দ্বীপের আবাসিক হোটেলগুলোতে কক্ষ আছে ১৪০০টি। প্রতি কক্ষে একজন করে দৈনিক ১৪০০ পর্যটক সেন্টমার্টিনে রাত্রি যাপন করুক। বাকি ১৬০০ পর্যটক গন্তব্যে ফিরে আসুক। বিগত ১০ বছর ধরে এই প্রক্রিয়ায় পর্যটক যাতায়াত করে আসছে। সরকারি নির্দেশনা এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে ভবিষ্যতেও এই ধারা অব্যাহত রাখতে চাই।
তিনি বলেন, আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারী সেন্টমার্টিন বিষয়ে নীতি নির্ধারনী সভা হচ্ছে। সেখানে সেন্টমার্টিন বিষয়ে কর্মপরিকল্পনা এবং সিদ্ধান্ত গৃহীত হচ্ছে জানতে পেরেছি। আমাদের বিশেষ অনুরোধ, ওই সভায় আমাদের দাবিসমূহ যেন গৃহীত হয়। আপনার নির্দেশনায় ১০টি জাহাজে করে দৈনিক ৩০০০ পর্যটক পারাপার করতে চাই।
এদিকে সেন্টমার্টিনে সীমিত জাহাজ চলাচল পুনর্বিবেচনার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে স্মারকলিপি দেয়া হয়। স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, জাহাজ মালিক কর্তৃপক্ষ এবং হোটেল মোটেল ব্যবসায়ীরা দীর্ঘ দুই দশকের বেশি সময় ধরে কক্সবাজারের পর্যটন শিল্প উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছি। বিশেষ করে বাংলাদেশের অফুরান সম্ভাবনার প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনের সুরক্ষায় পরিস্কার পরিচ্ছন্নতাসহ বজলবায়ুর নেতিবাচক প্রভাব থেকে দ্বীপকে রক্ষার জন্য নানা কর্মসূচি পালন করে চলেছি। ২ বছর আগে করোনা মহামারীর শুরু থেকে এই পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে জাহাজে পর্যটক ওঠানামা এবং পারাপার করে আসছি। সেন্টমার্টিনে স্বাস্থ্যবিধি কার্যকর থাকায় এ পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত হয়ে কেউ মারা যায়নি। কারো করোনা শনাকও হয়নি। এনিয়ে প্রধান গণমাধ্যমগুলোতে সংবাদও প্রকাশ হয়েছে। সেন্টমার্টিনকে করোনামুক্ত রাখতে জাহাজ মালিক কর্তৃপক্ষের ভূমিকা অনস্বীকার্য। যেহেতু জাহাে সেন্টমার্টিন যাতায়াত করে থাকেন পর্যটকেরা।
উক্ত স্মারকলিপিতে আরও উল্লেখ করা হয়, ২০১৭ সালে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে বাংলাদেশে আশ্রিত প্রায় ৮ লক্ষ রোহিঙ্গাসহ ১২ লক্ষাধিক রোহিঙ্গাকে মানবিক আশ্রয় দিয়েছেন এবং তাদেরকে মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দিয়েছেন। তাদের খাওয়াচ্ছেন। যে কারণে বিশ্ব নেতৃত্ব আপনাকে ‘মানবতার মা’ স্বীকৃতি দিয়েছেন। আপনি জাতির জনকের কন্যা, দূরদৃষ্টি সম্পন্ন নেত্রী। আপনার সুদৃঢ় ও দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল। শুধুমাত্র কক্সবাজারের মতো একটি জেলাতেই ৭৩টি মেগাউন্নয়ন প্রকল্প চলমান। যার বিপরীতে সাড়ে ৩ লাখ কোটি টাকার উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে। কয়েক বছরের মধ্যে প্রকল্পগুলো দৃশ্যমান হলে কক্সবাজারের চেহারাই পাল্টে যাবে। বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের আবেদন ও ব্যাপ্তি বাড়বে বহুগুনে। কক্সবাজারের পাঁচ শতাধিক হোটেল মোটেল, শুটকি, লবণ, চিংড়িসহ নানা ব্যবসার পরিধি বাড়বে। ৬/৭ লাখ বেকার মানুষের নতুন কর্মসংস্থান হবে। এসব ব্যবসা বাণিজ্যের অন্যতম প্রাণশক্তি হচ্ছে সেন্টমার্টিন। কারণ, সেন্টমার্টিন ঘিরেই এক তৃতীয়াংশ পর্যটক আগমন ঘটে কক্সবাজারে। কিন্তু সেন্টমার্টিনে যদি পাটিক সীমিত করা হয়, তাহলে কক্সবাজারে হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগে তৈরি হোটেল মোটেল ও ব্যবসা এবং পর্যটন খাতে লক্ষ কোটি টাকার বিনিয়োগে ধস নামবে।
মানবতার মা প্রশাসন এবং বিভিন্ন গণমাধ্যম সুত্রে জানতে পেরেছি, সেন্টমার্টিন সুরক্ষায় আপনার কার্যালয় থেকে ১৩ দফা সুপারিশ বাস্তবায়নের
নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যা বাস্তবায়নে মাঠে নেমেছে স্থানীয় প্রশাসন। ইতোমধ্যে সেন্টমার্টিন দ্বীপে অবৈধভাবে নির্মিত হোটেলসহ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। ময়লা আবর্জনা সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কারণে দ্বীপের ঝুঁকি যেন না বাড়ে সে ব্যাপারে হোটেল মালিকদের নির্দেশনা দিয়েছে প্রশাসন। দ্বীপের যানবাহন চলাচলেও বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। মা কচ্ছপের ডিম পাড়ার পরিবেশ সৃষ্টিসহ জীব বৈচিত্র্য সংরক্ষণে দ্বীপের চতুর্দিকে মাছ ধরার জালফেলা বন্ধ রাখা হয়েছে। প্রতিবেশ সংকটাপন্ন ছেরাদিয়া দ্বীপেও পর্যটক যাতায়াত ও যাত্রিক নৌযান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। শান্ত মৌসমে ১০ টি জাহাজে সৈনিক ৩০০০ পর্যটক আসা যাওয়া করছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ক্ষেত্রেও জাহাজ ও দ্বীপে সচেতনতামূলক প্রচারণা চালানো হচ্ছে। যে কারণে এখনো সবকিছু ঠিকঠাক আছে। সেন্টমার্টিন এখনো করোনামুক্ত।
ভয়েস/আআ